মনসুর আলম মুন্না :

(পর্ব–১)

কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হায়দারপাড়া এলাকার প্রায় দুই শত বছরের পুরনো একটি কবরস্থান আজ দখলদারদের কবলে।  অভিযোগ উঠেছে—স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতা কবরস্থানের পাহাড় কেটে দোকানঘর, টয়লেট, এমনকি মুরগির খামার ও গরুর গোয়ালঘর পর্যন্ত নির্মাণ করেছেন।

কবরের উপর ঘর, পাশে টয়লেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

সরেজমিনে দেখা গেছে, নোমানিয়া মাদরাসা সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী কবরস্থানের রাস্তার পাশের অংশ পাহাড় কেটে সমতল করে নির্মাণ করা হয়েছে আটটি দোকান ও পাঁচটি ঘর। দোকানগুলোতে চলছে ফার্মেসি, ভাতের হোটেল, মুদির দোকানসহ নানা ব্যবসা। কিছু ঘরের আঙিনায় এবং দেয়ালের নিচেই দেখা মিলছে পুরনো কবরের চিহ্ন। কবরের পাশে তৈরি টয়লেট ও গবাদি পশুর গোয়ালঘর থেকে নির্গত ময়লা–আবর্জনা কবরের উপরেই জমা হচ্ছে—যা দেখে উপস্থিত মানুষদের গা শিউরে ওঠে।

ক্ষমতার দাপটে কবর দখল

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এহেছান, তার ভাই বেদার ও দিদারসহ একাধিক আত্মীয়-স্বজন দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এই দখল কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী একাধিকবার প্রতিবাদ জানালেও উল্টো ভয়ভীতি ও মামলা–হামলার হুমকি পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রবীণ মুরব্বি আব্দু রহমান বলেন,

“এই কবরস্থান আমাদের দাদারও দাদার আমলের। শত শত মানুষ এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত। অথচ কিছু প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ কর্মী কবরের উপরই ঘর তুলেছে। প্রতিটি ঘরের নিচে শিশুসহ অসংখ্য কবর রয়েছে।”

স্থানীয় মসজিদ কমিটির সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন,

“দুই শত বছরের কবরস্থানের মাটি কেটে সমান করে দোকান ও ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী বারবার বাধা দিলেও তারা শোনেনি। এখন আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।”

এলাকাবাসীর ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ

দখলদারদের অব্যাহত দাপটে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা একত্রিত হয়েছেন। প্রায় ছয় শতাধিক মানুষের বসবাস এই এলাকায়। তারা কবরস্থান দখলমুক্ত করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দাবি তুলেছেন।

স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন,

“এহেছান ও তার ভাইয়েরা আওয়ামী লীগ নেতার পরিচয় ব্যবহার করে দোকান নির্মাণ করেছেন। এতে কবরস্থানের জায়গা ছোট হয়ে পড়েছে। মৃত ব্যক্তিদের কবর দিতে আজ জায়গা পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।”

প্রশাসনের আশ্বাস

বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রশাসনের নজরে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার এলাকাবাসীর পক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াছমিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানার কাছে জমা দেওয়া হয়।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা বলেন,

“অভিযোগ পেয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। তদন্ত সাপেক্ষে যাচাই-বাছাইয়ের পর নিয়মিত মামলা রুজু ও কবরস্থান দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন জানান,

“স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্যানেল চেয়ারম্যানের বক্তব্য

চৌফলদণ্ডী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মনজুর আলম বলেন,

“এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের নোটিশ দিয়ে ডাকা হবে। প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কবরস্থান দখলমুক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।”

এলাকাবাসীর প্রত্যাশা

এলাকাবাসীর একটাই দাবি—

“দখলমুক্ত করে আমাদের পবিত্র কবরস্থান ফিরিয়ে দিন। প্রশাসন একবার ব্যবস্থা নিলে আমরা নিজেরাই বাউন্ডারি প্রাচীর নির্মাণ করব।”


দুই শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী কবরস্থানের জায়গায় দখলদারিত্বের অভিযোগে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। সবাই এখন অপেক্ষায়—কবে পবিত্র এই কবরস্থান দখলমুক্ত হয়ে তার মর্যাদা ফিরে পায়।